মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান আধুনিক বাংলা গানের জগতে এক অনন্য নাম। তাঁর গীতিকবিতা যেমন ভাবের গভীরতায় সমৃদ্ধ, তেমনি সুর ও সঙ্গীতের সঙ্গে চমৎকার সামঞ্জস্যপূর্ণ। আধুনিক বাংলা গান রচনার ক্ষেত্রে তাঁর অনন্য কৌশল রয়েছে, যা গানের কথাকে সাধারণ লিরিকের চেয়ে অনেক বেশি গভীর ও প্রাণবন্ত করে তোলে।
মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের গীত রচনার বিশেষ বৈশিষ্ট্য:
১. কাব্যিকতা ও সংবেদনশীলতা
তিনি গানের কথাকে নিছক ছন্দোবদ্ধ বাক্য না বানিয়ে একেকটি কবিতার মতো গড়ে তোলেন। তাঁর গানগুলোয় কাব্যিক ভাব, শব্দের ব্যঞ্জনা ও গভীর চিত্রকল্প ফুটে ওঠে, যা শ্রোতাকে আবেগপ্রবণ করে তোলে।
২. হৃদয়স্পর্শী গল্প বলার ক্ষমতা
গানের মধ্যে গল্প বলার দক্ষতা তাঁর গীতিকবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেমন—
“যদি রাত পোহালে শোনা যেতো, বঙ্গবন্ধু মরে নাই”— এই গানটি শুধু একটি গান নয়, এটি একটি শোকগাঁথা ও প্রত্যাশার মিশ্রণে গড়া এক অনন্য সৃষ্টি।
৩. সহজ-সরল কিন্তু গভীর ভাবনা
তাঁর গানগুলো সহজ ভাষায় লেখা হলেও প্রতিটি লাইনে থাকে একটি গভীর জীবনবোধ। উদাহরণস্বরূপ,
“আমার বুকের মধ্যে খানে”— গানটিতে প্রেমের সহজ অথচ মর্মস্পর্শী প্রকাশ ঘটেছে।
৪. লোকগীতি ও আধুনিকতার সমন্বয়
তাঁর গানে লোকজ উপাদানের ব্যবহার লক্ষণীয়। অনেক ক্ষেত্রে তিনি লোকসংগীতের সুর-ছন্দকে আধুনিক সঙ্গীতের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন, যা গানকে সহজবোধ্য ও শ্রুতিমধুর করে তোলে।
৫. দেশপ্রেম ও সামাজিক বাস্তবতা
তাঁর গানে দেশপ্রেম ও সামাজিক বার্তা স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে তিনি অসংখ্য গান লিখেছেন, যা মানুষকে উজ্জীবিত করেছে।
আধুনিক বাংলা গানের কলাকৌশল ও রফিকউজ্জামানের অবদান
- প্রকৃতির রূপক ব্যবহার: তাঁর গানগুলোতে প্রকৃতির উপমা ও রূপকের বিস্তর ব্যবহার আছে, যা শব্দচিত্রকে সমৃদ্ধ করে।
- সুরের সাথে লিরিকের গভীর সংযোগ: অনেক গীতিকার গান লেখেন আলাদা করে, তবে রফিকউজ্জামানের গানগুলো সুরের সঙ্গে অত্যন্ত সুন্দরভাবে খাপ খায়।
- বাকসংক্ষেপ ও ছন্দময়তা: তাঁর গানে অপ্রয়োজনীয় শব্দ নেই; প্রতিটি শব্দ অত্যন্ত হিসাব করে বসানো হয়, যাতে গানটি শ্রুতিমধুর হয়।